
সব ধরনের ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা ক্লাব সংগঠনের
- আপলোড সময় : ০৯-১০-২০২৫ ০৩:৫৫:৪৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-১০-২০২৫ ০৩:৫৫:৪৭ অপরাহ্ন


আমিনুল ইসলাম বুলবুল দ্বিতীয় দফায় বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বলেছেন, আল্টিমেটাম দেওয়া ক্লাবগুলোর জন্য আলোচনার দুয়ার খোলা। তবে বোর্ডপ্রধানের সেই প্রস্তাবের কথা জেনে সংবাদ সম্মেলনে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান বললেন , “আলোচনার তো কিছু নেই। নির্বাচনই তো আমরা মানছি না। উনার এখন বলার কিছু নেই, অবৈধ সভাপতি।”
গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা ক্লাব ক্রিকেট অর্গানাইজার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিসিসিওএ) গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। বিসিবি নির্বাচনে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও সরকারের হস্তক্ষেপের নানা অভিযোগে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নির্বাচন পিছিয়ে সুষ্ঠভাবে আয়োজন করা না হলে ঢাকার লিগ ক্রিকেট বর্জন করবে ক্লাবগুলি। ৪৮টি ক্লাব এই দাবিতে একমত বলে জানানো হয়েছিল তখন। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার দুদিনের মাথায় আগের সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের কথাই জানানো হলো তাদের পক্ষ থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, জেলা পর্যায়েও সব ধরনের ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকবে এখন থেকে। অ্যাক্টিভওয়্যার সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামান ছাড়াও ছিলেন ডিসিসিওএর আহবায়ক ও ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবু, ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কাউন্সিলর সাবেক জাতীয় অধিনায়ক তামিম ইকবাল, কাঠালবাগান গ্রীন ক্রিসেন্ট ক্লাবের কাউন্সিলর মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদ, জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর এসএম আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ানের মতো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো বেশ কজন এবং বিভিন্ন ক্লাব ও জেলার কাউন্সিলর প্রতিনিধিরা। নির্বাচন ফিক্সিং, সরকারের হস্তক্ষেপ, সাজানো ছক অনুসরণ, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় এরকম অনেক অভিযোগ করে করেছিলেন তামিম, ইমরোজ, রেদুয়ানরা।
অ্যাক্টিভওয়্যার মোহামেডানের পরিচালক ও কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান জানালেন, আগের ঘোষণা অনুযায়ী লিগে খেলবেন না তারা এবং এই সিদ্ধান্তে সামনের সময়টাতেও ঐক্যবদ্ধ থাকবেন সবাই।
“আমরা বলতে চাই ক্রিকেটের সৌন্দর্য হারিয়েছে। অতএব আপনারা যদি এভাবে চলতে থাকেন, তাহলে আমরা ক্রিকেটটা খেলব না। যে কোনো ধরনের লিগ ক্রিকেট এবং জেলার ক্রিকেটের প্রতিনিধি আছেন এখানে, উনাদের সঙ্গেও আলাপ করেছি, জেলা পর্যায়েও আমরা ক্রিকেট বর্জন করব। আমরা এই সিদ্ধান্তে ঐক্যবদ্ধ থাকব।”
“ক্লাবগুলোকে যদি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় বা কোনো ধরনের হুমকিধামকি দেওয়া হয় কিংবা ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলা হয়, সবকিছুতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। আজ থেকে আর সময় দেওয়ার কিছু নেই। আমাদের ক্রিকেট আপাতত বন্ধ থাকবে।”
গত সোমবার বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ এই নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয়বার সভাপতির দায়িত্ব পান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ক্লাবগুলির লিগ বর্জনের ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়ে বোর্ডপ্রধান সেদিনই বলেছিলেন, আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবেন তিনি। তবে মাসুদুজ্জামান বললেন, আলোচনায় বসা তো বহুদূর, আমিনুলকে সভাপতিই মানেন না তারা।
“আলোচনার তো কিছু নেই। নির্বাচনই তো আমরা মানছি না। নির্বাচন বর্জন করেছি। নির্বাচনের ব্যাপারে অনেকবার বলেছিৃ অনেকবার বলেছি, নির্বাচন হতে না দেওয়া হোক। কিন্তু কথাটি কেউই শোনেনি। উনার এখন বলার কিছু নেই, অবৈধ সভাপতি।” নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোদের ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন আমিনুল। এই বক্তব্যের জবাবে তীব্র প্রক্রিয়া জানালেন মাসুদুজ্জামান।
“উনি একজন মানুষ আমাদেরকে বিদ্রোহী আখ্যা দেন। উনি তো একজন সাবেক সভাপতি হয়ে এসব বলতে পারেন না। উনি তো আমাদের অভিভাবক। আজকে যদি সভাপতি নাও হন, উনি তো আমাদের বুলবুল ভাই। উনি একজন মার্জিত লোক। উনি তো আমাদের বিদ্রোহী বলতে পারেন না। আমরা বিদ্রোহী নই।”
নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে মাসুদুজ্জামানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত তামিম ইকবালও, “আমার নিজের বক্তব্য প্রথম দিন থেকেই পরিস্কার। আমি মনে করিনা এটা কোনো নির্বাচন ছিল।” নির্বাচনের ই-ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই অধিনায়ক ও দেশের সফলতম ওপেনার।
“আমি খুবই হাস্যকর একটা জিনিস দেখলাম এই নির্বাচনে। ৪২ বা ৪৩ ভোট কাস্ট হয়েছে ক্লাব ক্যাটাগরিতে। এর মধ্যে ৩৪টটি ই-ভোট। ই–ভোটিং কেন হয়? আপনি দেশে না থাকলে বা ভোট সেন্টারে যেতে না পারলে। কিন্তু ৩৪টা ই-ভোটিং করা ওই ৩৪ জনই সেদিন ভোট সেন্টারে ছিলেন। ১২ জন যারা প্রার্থী তারা প্রত্যেকে ই-ভোটিং করেছেন। এটার মোটিভ কি? উনাদের কাজকর্মেই নানা কিছু প্রমাণ হয়ে যায়।”
তামিমের দাবি, নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে নিশ্চিতভাবেই ভোটে জিততেন তিনি। কিন্তু নানারকম প্রস্তাব দেওয়ার পরও বৃহত্তর স্বার্থে এমন নির্বাচন থেকে তারা সরে দাঁড়িয়েছেন।
“আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল একটা স্বচ্ছ নির্বাচন। সবার জন্যই। এটাই আমি চেয়েছিলাম। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আমি যদি ব্যাক্তিগতভাবে দাঁড়াতাম (নির্বাচনে), আমার পক্ষে কোন টিম আছে, বিপক্ষে কোনো টিমৃ তার পরও আমি সহজেই পাস করতাম। এই কোরামে কোনো রাজনৈতিক দলের না। আমরা সবাই ক্রিকেটের স্বার্থে আসছি এখানে।”
“দিনশেষে আমার কাছে মনে এমন ১২ জন বা ২৫ জন আসুক, যেন ক্রিকেটকে কোনো না কোনোভাবে সাহায্য করতে পারে। ওইভাবে চিন্তা করেই কিন্তু ভোট হয়। এভাবে করেই আমরা চাচ্ছিলাম ভোট হোক। এখানে কোনো সিলেকশন হোক, আমরা চাইনি। আমি একা দাঁড়ালেও খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, ভোট করতে পারতাম। আগেও আমার জন্য অনেক প্রস্তাব ছিল টেবিলে। যদি আমি চাইতাম, তাহলে নিতে পারতাম।”
ঢাকা তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগ শুরু হওয়ার কথা ছিল কয়েক দিন পরই। এরপর হওয়ার কথা দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ, দেশের মূল ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেট আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। সব টুর্নামেন্টই এখন অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল।
সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা ক্রিকেটারদের। জাতীয় দল ও আশেপাশে থাকা ক্রিকেটারদের বাইরে যে শত শত ক্রিকেটার, তাদের জীবিকার মূল উৎসহ এই লিগগুলো। ক্রিকেটারদের জন্য তাই হয়তো দুর্ভোগও অপেক্ষা করছে। সেই দায় নির্বাচন আয়োজনকারীদেরই দিলেন তামিম।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ